বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

রম্য রচনা।দাম্পত্য সুখ -জানে আলম মুনশী

রম্য রচনা।দাম্পত্য সুখ -জানে আলম মুনশী

রম্য রচনা-

♥দাম্পত্য সুখ♥

সীমাহীন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ক্যাশ কাউন্টারে অপেক্ষা করছে হাদি।
ঈদের কেনাকাটা শেষ করে অবশেষে ক্যাশ কাউন্টারে ফিরে এলো দোয়েল।
দোয়েল হাদির বিবাহিত স্ত্রী। দোয়েল তার অরজিনাল নাম না। তার অরজিনাল নাম কেয়া। হাদি আদর করে তার নাম দিয়েছে দোয়েল।

এই নামটি পেতে কেয়াকে বহু কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। বর্তমান যুগের ছেলেরা বউয়ের কত সুন্দর সুন্দর নাম দেয়। ইশারা ইঙ্গিতে হাদীকে অনেক বার বোঝানোর পর হাদি তার নাম দিল দোয়েল।

কেয়া চেয়েছিল হাদি তার নাম দিবে ময়না, শ্যামা কিংবা টিয়া।

কিন্ত এসব নাম এখন পুরান হয়ে গেছে। হাদী প্রথমে কেয়ার নাম দিয়েছিল ‘ঢালা ঘুরানি।’
কিন্তু ঢালা ঘুরানি পাখি দেখতে কেমন হয় কেয়া তা জানে না।
তাইতো সে ওই নামটি নিতে রাজি হলো না ।
কেয়া চেয়েছিলাম হাদি তার নাম রাখবে মাছরাঙ্গা।মাছরাঙ্গার মধ্যে কেমন একটা বউ বউ ভাব আছে সব সময় সেজেগুজে থাকে। দেখতেও সুন্দর।

হাদি কি মনে করে তাকে দোয়েল নাম দিল তা এখনো জানা হয়নি কেয়ার। এখন পর্যন্ত হাদি কেয়াকে দোয়েল নামেই ডাকে।

দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষার পর বিল পরিশোধ এর সময় দোয়েল হাদীকে বিল পরিষদের জন্য ইশারা করল।

-ক্যাশে না কার্ডে?
হাদির এমন প্রশ্নে দোয়েল খানিকটা ভেবে নিল।

– ক্যাশে দাও, ক্যাশে।
– ক্যাশে কেন? কার্ড দিলে কি সমস্যা?
– সমস্যা আছে সোনা। অত প্রশ্ন করো না তো। দাও দাও দাও। ক্যাশ দাও।
হঠাৎ ব্যাস্ত হয়ে যায় দোয়েল।
– কার্ডে দিলে কি সমস্যা একটু বুঝাও না।
– গাড়ীতে যেতে যেতে বলবো।
– না, না এখনই বলো।
ন্যাকা কিছু বোঝে না।
-বুঝি না, তুমি বুঝাও।
– কার্ড দিলে ডকুমেন্ট থেকে যায় না! বোকার হাড্ডি।
-ডকুমেন্ট থাকলে সমস্যা কি?
-সমস্যা আছে বাবু। কিছুই বুঝতে পার না? তুমি হলে সাইড ইঞ্জিনিয়ার।
– অফিস ফাঁকি দিয়ে মার্কেটে মার্কেটে ঘোরাঘুরি করো প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবা। প্রমান রাখা ভালো না।
– তাই নাকি? ভালই তো বুঝ, আগে সরকারী চাকুরী করতা নাকি?
– রাগ করো কেন সোনা।
মানুষের কত রকম অভিজ্ঞতাই তো থাকে।
– তো আর কি অভিজ্ঞতা আছে শুনি।
– ছি ছি বাবু, তুমি নোংরা প্রশ্ন করছো।
– প্রশ্ন নোংরা হলো কি করে?
উত্তরটা হয়তো নোংরা হতে পারে।
তুমি কিন্তু আমাকে রাগানোর চেষ্টা করছো। তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন আমি আজকে রাগবো না।

বিল পরিশোধ শেষে সদর গেট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময়- কেন জানি দোয়েলের মনে হলো পোশাক টা তার মন মত হয়নি। চেঞ্জ করতে পারলে ভালো হতো ।

যেই রকম ভাবনা সেই রকম কাজ হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে হাদীকে গেটে দাঁড়াতে বলে, দোয়েল আবার রওনা হলো মার্কেটে ভেতরে। উদ্দেশ্য পোষাকটা বদলানো।

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে এবার বন্যায় রূপান্তরিত হল হাদির মনে। সেই বন্যায় ঘর বাড়ি ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকলেও অবশেষে ঘর ভাঙলো না হাদির।
ঈদ আসন্ন। এই মূহুর্তে বউয়ের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে সংসারে অশান্তি করতে চায় না হাদি।

আজকের জন্য সাহস আর ধৈর্যের পরীক্ষায় পাস করল হাদি। কারণ দাম্পত্য সুখ বলে কথা।

ঘন্টা খানিক অপেক্ষার পর দোয়েলের ফোনে ফোন দিল হাদি। তাকে দ্রুত চলে আসতে বলায়-
পোশাক টা চেঞ্জ করতে আবার আসতে হবে, সেই শর্তে বেতার মারফত কনফার্ম হয়ে ফিরে এলো দোয়েল ।তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হল এই সুখি দম্পত্তি।

পোশাক চেঞ্জ করতে আবার আসতে হবে, বেতার মারফত এই কথাটি শোনার পরে- বেতার যন্ত্রটি আছার মেরে ভাঙ্গতে ইচ্ছা করলেও ভাঙতে পারলো না হাদি। লোক লজ্জার ভয়ে সবকিছু হজম করতে হল তাকে।

এরপরও বাসায় আসতে আসতে আরেকটি শর্ত জুরিয়ে দিলো দোয়েল। -আজ যেহেতু কেনাকাটায় সময় দিতে পারলে না, সেহেতু আবার যখন আসবো তখন কিন্তু আমাকে একটা লিপস্টিক কিনে দিতে হবে।

হাদি রাশভারি মুখে, পাশে বসা দোয়েল পাখিটার দিকে আড় চোখে তাকাইল একবার। রাগে ক্ষোপে তার শরীর জ্বলে যায়, কিন্ত কোন ভাবেই রাগ দেখাতে পারলো না সে।
হাদির মনের অবস্থা বুঝার কোন ইচ্ছা নাই দোয়েলের। সে ভালোবাসার আঁচলে হাদির বাহু গোচরে হাত লুকাইয়া দিয়া মিষ্টি সুরে বলল-
-‘এমন করে তাকাও মনে হয় লিবিসটিকের দাম লাখ টাকা।’

এই মূহুর্তে সেক্স পিয়ারের এ্যাবসার্ড নাটকের একটি দৃশ্য ভেসে উঠল হাদির মনে।

এখন তার ইচ্ছে করছে শরৎ এর সাদা মেঘের আকাশে তাকিয়ে তাকিয়ে জীবনানন্দের একখানা কবিতা পড়তে
-“আবার আসিব ফির…….”

তাও পারলেন না তিনি। মনুষ্যত্বের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে হাতের উপর হাত রাখিয়া বললেন ‘নো কমপ্লেইন।

এরপর রাস্তায় তাদের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি।

বাসায় এসে সেই ড্রেসটি কয়েকবার ট্রাইল দিল দোয়েল। জানতে চাইলো হাদির কাছে- কেমন লাগছে তাকে। হাদি আন মনে বলে দিল-ভালো।
এমন উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলো না দোয়েল।
– কেমন ভালো লাগছে? একটু ভালো করে বলো না?
রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করে দোয়েল।
বাধ্য ছেলের মত আবারো একই কথায় উত্তর দেয় হাদি।
– খুব সুন্দর।
-মন থেকে বলছো?
-হ্যা, মন থেকে বলছি।
অনেক রাত হলো এখন ঘুমাও। বিরক্ত হয় হাদি।
-রাগ করো কেন? ভনিতা করে দোয়েল।
-জোসনা রাত। চল না একটু ছাদে যাই।
আদরে কন্ঠে বায়না ধরে দোয়েল।
বিরক্ত হয় হাদি। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীর অফিস ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘক্ষন মার্কেটে মার্কেটে ঘুরাঘুরি করে মাঝ রাতে ছাদে যেয়ে চাঁদ দেখার কোন ইচ্ছা নাই তার।
কিন্ত দোয়েলের বাড়াবাড়ি আর দাম্পত্য সুখের কথা চিন্তা করে রাজি না হয়ে পারলো না সে।
মধ্যাকাশে পূর্নাঙ্গ চাঁদের আলোয়ে একান্ত ঘনিষ্ট হয়ে হাদিকে জড়িয়ে ধরে দোয়েল। তারপর মিষ্টি করে বলে-
‘দেখ না আমরা কত সুখি!
ইচ্ছে করে এই জোসনাক ফাঁকি দিয়ে তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাই কোন দূর অজানায়। যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না।
থাকবে না অফিস, থাকবে না বস। শুধু তুমি আর আমি। শুধুই আমরা।

অনেক না বলা কথার জাল বুনতে বুনতে পূর্নিমার চাঁদের মধ্যে নিজেকে খুঁজতে থাকে হাদি। জোসনার আলোয়ে খুঁজে ফিরে দাম্পত্য সুখ। ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে এক দৃষ্টতে চেয়ে থাকে সে, যদিও একবারের জন্যও সেই সুখের ছিটা ফোঁটা চোখে পড়ে না তাঁর।
নিশ্চুপ- নিরাবতার মাঝে একখন্ড মেঘ এসে ঢেকে দেয় জোসনার আলো। আচমকা নেমে আসে অন্ধকার।
সেই অন্ধকারে ভালোবাসার টানে হারিয়ে যায় এই “সুখি দম্পতি।”
লেখক: জানে আলম মুনশী।
পুলিশ অফিসার।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




themesbazar_brekingnews1*5k
© All rights reserved © 2020
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD